দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইল না। সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি। কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না-সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি।
এই ব্যস্ত ও যান্ত্রিক জীবনে এখন মনে হয় স্কুল জীবন শেষ না হলেই ভাল হতো। মনুষ্যজীবনের শৈশবকালেই নির্ধারিত হয় তার চলার গতিপথ। আর এই গতিপথ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা থাকে স্কুলের গন্ডিতে পাড় করে আসা দিনগুলোর শিক্ষা-দর্শন। স্নিগ্ধ ও নির্মল বাতাসে ভেসে কাটানো সময়গুলো তাই সকল মানুষের কাছে পবিত্রতম ও আনন্দের।
যে স্কুল আমাকে পড়তে ও লিখতে শিখিয়েছে, সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছে, ন্যায়-অন্যায় চিনতে শিখিয়েছে, সৎ হতে ও ধর্ম মেনে চলতে শিখিয়েছে, সেই স্কুল জীবনে কাটানো সময় হল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্কুলের স্যাররাই আমার শিক্ষার ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। আজ যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তখন ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে সবসময়ই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আদর্শ জীবনাচরণ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লোকমান আলী স্যারের কড়া শাসন, মল্লিকা রঞ্জন স্যারের বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ানোর কৌশল, সিনিয়র পনির উদ্দীন স্যারের ইংরেজি লিটারেচার বুঝানোর সময় বলা গল্প, সামাদ স্যার ও মফিদুর রহমান স্যারের বিজ্ঞান পড়ানো আজো খুব মনে পড়ে। এছাড়াও সেই ১৯৯০ সালে দিকে নতুন যোগদানকৃত মোঃ মেহেরুজ্জামান ও ভূবন মোহন বর্মণ স্যারের ক্লাস ও তাঁদের নিকট প্রাইভেট টিউশনী পড়ার অসংখ্য মধুর স্মৃতি আজো হৃদয়ে আলোড়িত হয়। মফিদুর রহমান স্যারকে নিয়ে একটা মজার বিষয় মনে পড়ছে-স্যারের একটা অভ্যাস ছিল, অকস্মাৎ ক্লাস শেষ করতেন, অর্থাৎ কোন একটা টপিক পড়ানো শেষ করেই উপসংহারে কোনকিছু না বলেই ক্লাস ছেড়ে খুব দ্রুত চলে যেতেন কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, তো আমরা বন্ধুরা স্যারের ক্লাস শুরুর আগমুহুর্তে এটা নিয়ে বাজি ধরতাম যে, স্যার কখন ক্লাসটা শেষ করবেন। প্রায়ই হারতাম কারণ স্যারের ক্লাস সমাপ্ত করার সময়টা ছিল একদম আনপ্রেডিক্টেবল, আর তার জন্য আমার আইসক্রিম দন্ড দিতে হতো। এরকম অন্যান্য স্যারদের সাথে এবং বন্ধুদের সাথেও হাজারো উল্লেখযোগ্য মজার মজার ঘটনার স্মৃতি আছে যা স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না।
স্কুল জীবন প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে প্রকৃত মানুষ হওযার ভিত্তি স্থাপন করে। শিক্ষার সাথে সাথে শিশুর অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা, আবেগ-অনুভূতির সবকিছুই পূর্ণতা পায় স্কুল লাইফ অতিক্রম করে। তাঁই মানুষ জীবনে যতই উন্নতি করুক, যতই উচ্চপদে আসীন হোন না কেন তাঁর স্কুল জীবনের অবদান সবসময়ই প্রথম হয়ে থাকবে।
নতুন স্থানে স্থানান্তরিত বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
ড. বিজন মোহন চাকী
সহযোগী অধ্যাপক
の
বিভাগীয় প্রধান রসায়ণ বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়, রংপুর