মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। মুখে না মানলেও মানুষ সুন্দরই খোঁজে। যখন শপিংয়ে যায় তখন কিন্তু সুন্দর জিনিসটাই কিনতে। চায়, সামান্য কলম থেকে গাড়ি পর্যন্ত। আসলে জগতের সর্বত্রই সুন্দরের পরম লীলা চলছে। শুধু মানুষ নয়, এমন কোনো প্রাণী দুস্কর যার মধ্যে সৌন্দর্য চেতনা প্রায় অনুপস্থিত। ছোট্ট বাবুই পাখি সুনিপুণ দক্ষতায় অসাধারণ নীড় তৈরি করে। বলা যায় সৌন্দর্য ভাবনা বা সৌন্দর্য চেতনা একটি সহজাত প্রবৃত্তি। সৌন্দর্য কি তা বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যায় না। এটি উপলব্ধির বিষয়। সৌন্দর্য শব্দটি যতই ছোট ভাবি না কেন, এর তাৎপর্য কিন্তু সুবিশাল। আসলে সৌন্দর্য কিসে? ফুলের রঙ-বেরঙের জৌলুসে নাকি সৌরভে? অনেকেই হয়তো উত্তর দেবেন বাহ্যিক রঙের বৈচিত্যমতায়ই ফুলের সৌন্দর্য আবার কেউ কেউ বলবেন, ফুলের সৌন্দর্য তার মন মাতানো সৌরভে। একটি ঘটনা দিয়ে। বিষয়টি আরও পরিস্কার করছি। এক প্রবাসী বাঙালি ছেলে সুদূর রাশিয়া থেকে শুধু ফেসবুকে এক মেয়ের রং-বেরঙের আধুনিক পোশাক পরিহিত ছবি দেখে মুগ্ধ হয়, যা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রুপ নেয়। এ সুতোর টানে একদিন দেশে এসে মেয়েটাকে সামনা-সামনি দেখে তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। পরে ভার্চুয়াল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যায়। স্রষ্টার সৃষ্টি এক অপার বিস্ময়। সে হোক কালো কিংবা ফর্সা, সুন্দর কিংবা অসুন্দর। আমরা মনে করি সৌন্দর্য তার রূপে নয়, গুণে। বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অন্তরের সৌন্দর্যটাই মূল কথা। পারস্যের কবি শেখ সাদি বলেছেন, বাহ্যিক সৌন্দর্য আকর্ষণ করে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য করে মনোমু”।
সময়ে বিবর্তনে আধুনিকভাবে ছোঁয়া লেগেছে আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলনে বলনে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আধুনিকভাবে এক শতাংশ ছোঁয়াও লাগেনি। তাইতো আমাদের কাছে কালো মানেই অসুন্দর। আসলে মানুষের রূপ ও সৌন্দর্য বিষয়টি বহুমাত্রিক। একে নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন বিষয়। স্থান- “কাল পাত্র ভেদে সৌন্দর্যের বহুমাত্রিকতার মান ওঠানামা করে। যেমন- বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এমন অনেক সুন্দরীকে কারো ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে কি আমরা সবাই কমবেশি সুন্দরের পূজারী নই? আমার কাছে যাকে সুন্দর লাগে তাকে অন্যের দৃষ্টিতে সুন্দর নাও লাগতে পারে। এটাই তো স্বাভাবিক। আর এটাই বহুমাত্রিকতা। হলো সৌন্দর্যের আমাদের মনে হয় বর্তমান বিশ্বের বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা নারীকে পণ্য হিসেবে আধুনিক রূপ। সময় ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে এটি একটি মুখোশ। এক ধরণের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি। এটা এমন কোনো থিম বহন করে না যা দিয়ে বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, বরং নারীদের যেন খানিকটা পণ্যে বাণিজ্যকরণের একটি পরিণত করে। কর্পোরেট জগতের জৌলুস বাড়াতেই রাখে বেশি ভূমিকা। আর যদি ভূমিকা রাখেও, তা নিতান্তই নগণ্য। বৃদ্ধ বয়সেও কিন্তু একটা সৌন্দর্য আছে। তাই একটা সময় পরে মানুষ আর সৌন্দর্যের পেছনে ছোটে না। খোঁজে একজন বিশ্বস্ত মানুষ। এ সময় দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। জীবনকে সফলতার মাপকাঠিতে বিচার করার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়। জীবন মহৎ কর্মের মধ্যে অতিবাহিত হয়ে থাকলে স্বার্থকতার শাখা-প্রশাখাগুলো খুঁজে বের করা সহজ হয়। বয়স বেড়ে যাওয়া মানে জীবনের অলিগলিতে বিচরণের অভিজ্ঞতা অর্জন এবং জীবনের সৌন্দর্যকে উপভোগ করা। জীবনের বিশালতায় রয়েছে এক অপার অসীম আনন্দ। বয়স বেড়ে যাওয়া স্রষ্টার এক অমোঘ বিধান। জীবনের অপরিহার্য সত্য হলো মৃত্যু। এই সময়ে নানাররকম সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। শরীরের কাছে মানুষ বড়ই অসহায়। তাইতো এ শরীরটি নিজের মনে না করে সৃষ্টি কর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করা বা সঁপে দেয়াটাই শ্রেয়। তাতেই হবে আত্মতৃপ্তি। অনাবিল সুখ আর অমরত্ব।
খন্দকার মাহফুজার রহমান মুকুল
প্রধান শিক্ষক
খারিজা কামাল সরকারি প্রাথমিক