প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

ইতিহাসে বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়

বৃটিশ আমলের অভিভক্ত বাংলার জনপদ বকসীগঞ্জ। বৃটিশ আমলে কিং কর বকসী নামে একজন ব্যক্তি অত্র জনগনে বসবাস করতেন। তিনি একজন ঘাটের মাঝি ছিলেন। তার নামানুসারে ঘাটের নাম হয় কিং কর বকসী। ঘাট। কলিকাতা, মুকরি, জলপাইগুড়ী এবং মুর্শিদাবাদ এর সাথে এই জনপদের ব্যবসা বাণিজ্য ছিল। কিংকর বকসী ঘাট এর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কিংকর বকদীর নামে এখানে বীনা বানিজ্যের পাটি সৃষ্টি হয় এবং কিংকর বরুনীর নামানুসারে অত্র অঞ্চলের নাম হয় বকসীগঞ্জ।

কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি অত্র এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা ভাবনা করেন। মরহুম আফতাব উদ্দীন খন্দকার (শাহ ফকির) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি একাধারে ৪০ বছর ছিলেন অত্র বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট। তিনি নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন আজকের এই বকসীগঞ্জ রাজিনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

মরহুম আফতাব উদ্দীন খন্দকার (শাহ ফকির) এর একজন মাত্র পুত্র সন্তান ছিল যার নাম রজব আলী। কিন্তু সে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কালা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পুত্রের নাম স্মরণীয় করে রাখতে বকসীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম রাখেন বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া (রজব থেকে রাজিবিয়া) উচ্চ বিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠনাটি ১৯৪৫ সালে স্থাপিত হয়। তদানিন্তন অবিভক্ত বাংলার জলপাইগুড়ী জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এম.ই (Middle English School) স্কুল হিসেবে পাঠদানের অনুমতি প্রাপ্ত হয়। যাহার স্মারক নং- ৩২২০, তারিখ-১৭/১২/১৯৪৫ ইং। নিম্ন মাধ্যমিক হিসেবে পাঠদানের অনুমতি ২৮/০৭/১৯৪৭ ইং যার স্মারক নং-৪৫৮০, এবং স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় ৩১/০৭/১৯৪৭ ইং যাহার স্মারক নং-২০৩৯। প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে ১৯৫৭ ইং সালে স্বীকৃতি প্রাপ্ত। যাহার স্মারক নং- ১১০০২ (২), তারিখ ২৬/০৩/১৯৫৭ ইং। অতঃপর উক্ত শিক্ষা বৎসরে অর্থাৎ ১৯৫৭ সালেই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ বিদ্যালয় (High school) হিসাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। যাহার স্মারক নং- IR-96/6306, তারিখ: ২২/১০/১৯৫৭ ইং। ১৯৫৮ সাল থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন। ১৯৬৯ ইং সালে বিজ্ঞান বিভাগ খোলার অনুমতি পায়। যাহার স্মারক নং- 11/3/107/1494, তারিখ: ১৪/০৬/১১৯৮৬৯

ইং এবং ১৯৯০ ইং সালে বাণিজ্য বিভাগ চালু করার অনুমতি প্রাপ্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বকসীগঞ্জ নামক স্থানে অবস্থিত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠ ১৯৬৯ সালে নদী

গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য এক জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় স্থাপন করা হয়। কিন্তু আবারো প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৯ ইং সালে নদীগর্ভে বিলিন হলে পরবর্তীতে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিষ্ঠানটির ক্লাশ চালু রাখা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দুই বার নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে ছিল না ঘর, ছিল না যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি আজ বর্তমান অবস্থায় এসেছে।

স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে একটি সুযোগ্য ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হইয়া আসিতেছে। বিদ্যালয়টিতে ১৬ জন শিক্ষক ও ৬ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী দ্বারা প্রায় ৬০৭ জন ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষা দান কার্য্য চলিয়া আসিতেছে।

অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন বা এসএসসি পাশ করে বহু শিক্ষার্থী দেশের কল্যাণে আত্ম নিয়োগ করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য।

* মরহুম আবুল হোসেন, (১৯৬০), প্রকৌশলী।

* মোঃ খয়বর হোসেন সরকার, (১৯৭২), ডি.জি.এম, কেরু এ্যান্ড কোং, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন।

মোঃ আব্দুল জলিল সরকার, ( ১৯৮০), ), সহকারী অধ্যাপক, চিলমারী ডিগ্রী কলেজ, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।

* * মোঃ আমিনুল ইসলাম, (১৯৮১), প্রধান শিক্ষক, বকসীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

মোঃ শামছুল হক, (১৯৮৩), প্রধান শিক্ষক, ফকির মোহাম্মদ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

* খন্দকার আব্দুল্লাহেল কাফি (১৯৮৩), প্রধান শিক্ষক, বুড়াবুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

* * মোঃ মেহেরুজ্জামান, (১৯৮৪), প্রধান শিক্ষক, বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

* মোঃ আইয়ুব আলী, (১৯৮৪), প্রধান শিক্ষক, বুড়াবুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম। *

খন্দকার মাহফুজার রহমান মুকুল (১৯৯০), প্রধান শিক্ষক, খারিজা কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

* মোঃ নুরনবী সরকার, (১৯৯২), প্রধান শিক্ষক, নতুন অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম। মোঃ নেয়ামুল হক সোনার, (১৯৯২), প্রধান শিক্ষক, গোড়াই রঘুরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

* – মোঃ কেরামত আলী সরকার, (১৯৯৫), প্রভাষক, পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

ড. বিজন মোহন চাকী (১৯৯৬), সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রসায়ণ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। মোঃ মেহেরুজ্জামান, (২০০৬), সিনিয়র অফিসার (আইসিটি), আইটি এন্ড এমআই এস ডিভিশন, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা